এলভিস প্রিসলিকে বলা হয় রক অ্যান্ড রোলের রাজা। হল অব ফেম–এ তাঁর নামে রয়েছে পাঁচটি তারা। একটি রক অ্যান্ড রোল, একটি কান্ট্রি, একটি গসপেল, একটি রকাবিলি এবং একটি আর অ্যান্ড বি। গানের এ পাঁচ ঘরানাতেই চমক সৃষ্টি করেছিলেন, বিশেষ অবদান রেখেছিলেন প্রিসলি। ১০০ কোটি অ্যালবাম বিক্রি হয়েছিল তাঁর। অভিনয় করেছিলেন ৩১টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে। একাধারে নায়ক ও গায়ক এলভিস প্রিসলির আজ ১৭ আগস্ট মৃত্যুদিন। জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি। আজ তিনি শুধুই কিংবদন্তি
১৯৩৫ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপির টুপেলো শহরে জন্ম নেন এলভিস অ্যারন প্রিসলি। তাঁর জন্মের সময় বাবা ভার্নন প্রিসলি ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কেননা তাঁর স্ত্রী গ্লাডিস প্রিসলির গর্ভে ছিল যমজ সন্তান। এলভিসের জন্ম হলেও তাঁর সহোদর মারা যায়। দরিদ্র ভার্নন কখনো রাজমিস্ত্রি, কখনো কৃষক, কখনো–বা কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করে পরিবার চালাতেন। আর ছোট্ট এলভিস মায়ের সঙ্গে নিয়মিত গির্জায় যেতেন। সমবেত কণ্ঠে সেখানে গাওয়া প্রার্থনাসংগীত তাঁর মন কেড়েছিল।
১১তম জন্মদিনে মা–বাবা এলভিসকে কিনে দেন একটি গিটার। ফ্রাঙ্ক স্মিথ শিখিয়ে দেন কয়েকটি কড। তারপর নিজেই বাজাতে শেখেন প্রিসলি। ধীরে ধীরে বাজাতে শুরু করেন নিজের শহরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে। এভাবেই বেড়ে উঠতে শুরু করেন গত শতকের অন্যতম সেরা শিল্পী।
লেখাপড়া শেষে গায়ক হিসেবেই ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন প্রিসলি। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা তখনো বদলায়নি। টানাটানির সংসার, বাবা তখন ক্রাউন ইলেকট্রনিক নামের এক কোম্পানির ট্রাক চালাতেন। বাধ্য হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ট্রাকচালক হিসেবে চাকরি শুরু করেন প্রিসলি। ফাঁকে ফাঁকে গানের চেষ্টা চলছিল। একপর্যায়ে অডিশন দিতে গিয়েছিলেন তখনকার আমেরিকার বিখ্যাত গায়ক ও সুরকার এডি বন্ডের কাছে। গান শুনে তিনি এলভিসকে বলেছিলেন, ‘গায়ক নয়, গাড়িচালক হিসেবেই তুমি ভালো করবে।’ কথাটা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল তাঁকে। নিজ উদ্যোগে চার ডলার খরচ করে তিনি রেকর্ড করেছিলেন ‘দ্যাটস হোয়েন ইয়োর হার্টএকস বিগেইন’ ও ‘মাই হ্যাপিনেস’ শিরোনামে নিজের দুটি গান। কাজটি করেছিলেন সান রেকর্ডস থেকে। ওই কোম্পানির মালিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই কাজটি করেছিলেন তিনি।
কিছুদিন পর ন্যাশভিলের সংগীত প্রযোজক স্যাম ওয়ার্থহ্যামের ফোন পান সান রেকর্ডসের মালিক। তাঁকে জানান, সম্প্রতি ‘উইদাউট ইউ’ শিরোনামে তিনি একটা গান শুনেছেন। সেটা তাঁর ভালোই লেগেছে। গায়ক ছেলেটাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। সানের মালিক স্যাম ফিলিপস এলভিসকে লোক মারফত স্টুডিওতে ডেকে পাঠান। এলভিসও ছুটে আসেন। গান করার সুযোগ পান এলভিস। শুরু হয় তাঁর পেশাদার সংগীতজীবন।
রাতারাতি পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে এলভিস প্রিসলির। ব্ল্যাক, ম্যুর ও এলভিস মিলে গড়ে তোলেন ব্যান্ড। দলটি নিয়ে নানা জায়গায় গান করতে থাকেন তাঁরা। এলভিসের কণ্ঠে ‘দ্যাটস অলরাইট মামা’ এবং ‘ব্লু মুন কেন্টাকি’ গান দুটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ‘হার্টব্রেক হোটেল’ গানটি প্রকাশের পর সেটি মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘এলভিস প্রিসলি’ বেরোলে সেটিও ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়। টানা ১০ সপ্তাহ বিলবোর্ড টপ চার্টের এক নম্বরে ছিল অ্যালবামটি।